আজ (১৮ মার্চ, ২০২৪) ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার অর্ন্তগত ইয়ারপুর ইউনিয়নে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে ((DAP) ) মূল বন্যা প্রবাহ এলাকা (Main Flood Flow Zone) হিসেবে চিহ্নিত ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় উত্তরণ প্রপার্টিজ লিমিটেড ও এ্যাচিভ কর্পোরেশন নামক আবাসন কোম্পানীর অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের জন্য মাটি ভরাট, প্লট বিক্রয়সহ সকল কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মহামান্য আদালত। একইসাথে আদালত প্রদত্ত উল্লেখিত নির্দেশ প্রতিপালন সম্বলিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্তবর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি মহামান্য আদালত উত্তরণ প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং এ্যাচিভ কর্পোরেশন নামক আবাসন কোম্পানী কর্তৃক মাটি ভরাট থেকে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় অবস্থিত মূল বন্যা প্রবাহ (Main Flood Flow) এলাকা (স্থানীয়ভাবে “গজাইরার বিল” নামে পরিচিতি) রক্ষায় বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হওয়ায় কেন তা অবৈধ, আইনবহির্ভূত ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীগণের উপর রুল জারি করেছেন। মহামান্য আদালত এ রুলে আইন, বিধি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী উল্লেখিত মূল বন্যা প্রবাহ এলাকা পুনরুদ্ধার ও রক্ষার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও বিবাদীগণের কাছে জানতে চেয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং ২৯২২/২০২৪) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে জনাব বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং জনাব বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলাধীন সাভার উপজেলাস্থ ইয়ারপুর ইউনিয়নের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ৬০০ একর আয়তনের একটি বিল রয়েছে যা স্থানীয়ভাবে “গজাইরার” বিল নামে পরিচিত। বিলটির দৈর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪ কিলোমিটার। এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে (DAP) মূল বন্যা প্রবাহ (Main Flood Flow) এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। বিলটি বর্ষাকালে পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে দৃশ্যত বিশাল এক সাগরে রূপ নেয়। এখনও এ বিলে দেশিয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। মৎস্য উৎপাদনের পাশপাশি শীতকালে ফসল ও সবজি চাষ হয় এ বিলে। বিলটির উপর নির্ভরশীল প্রায় ১৪ টি গ্রামের কৃষক ও মৎসজীবি। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বিল বর্তমানে নানামূখী হুমকির সম্মুখীন। নির্বিচারে এ বিলের জলাশয় ও কৃষি উপযোগী নীচু জমি ভরাট করা হচ্ছে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য। ইতোমধ্যে উত্তরণ প্রপার্টিজ লিমিটেড নামক আবাসন কোম্পানী বিলের ইছরকান্দি, মনোসন্তোষ ও সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ২৫০ বিঘা এবং এবং এ্যাচিভ কর্পোরেশন বিলের সাতাইশকান্দি মৌজায় প্রায় ২২০ বিঘা উর্বর জমিতে কোম্পানীর সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে যার কোনোটিরই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমোদন।
জলাশয় রক্ষায় বিদ্যমান আইনের বিধান লঙ্ঘন করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া উত্তরণ প্রপার্টিজ লিমিটেড ও এ্যাচিভ কর্পোরেশন নামক আবাসন কোম্পানী কর্তৃক জলাশয় ভরাট বন্ধে ও বিলটি সংরক্ষণে বেলা উল্লেখিত মামলাটি দায়ের করে।
মামলার বিবাদীগণ হলেন – গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক, ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা জেলার উপ পরিচালক, সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উত্তরণ প্রপার্টিজ লিমিটেড এবং এ্যাচিভ কর্পোরেশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ আলী, বার-এট-ল’ এবং তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-
এস. হাসানুল বান্না
এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও আইনজীবী, বেলা
মোবাইল ০১৮৩৩০২৬২৬২
তারিখঃ ১৮ মার্চ, ২০২৪।